এই ভালোবাসার শেষ কোথায়?
দশম পর্ব (১০ম পর্ব)
৯ম পর্ব পড়ুন এখানে... স্কুল থেকে ফিরে ছেলে (স্বপ্ন) তার বাবার কাছে আবার গল্প শুনতে বসে। ও বাবা, তারপর কী হয়েছিলো?
বাবাঃ তারপর! মেয়েটার বিয়ে হয়ে যায়।
ছেলেঃ কিন্তু সেই ছেলেটার কী হলো?
বাবাঃ গল্পের মজার কাহিনী তো এখানেই। মেয়েটা তো জানতোই না যে তার বিয়ে কার সাথে হচ্ছে। সে বিয়ের পর জানতে পারে এবং গাড়িতে ওঠার সময় দেখতে পারে। দেখে তো নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছিলো না।
ছেলেঃ কেন বাবা?
বাবাঃ কারণ সে দেখলো তার বিয়ে হয়েছে সেই মেসেঞ্জারে কথা বলা ছেলেটার সাথে।
ছেলেঃ কী বলো বাবা! এটা কীভাবে সম্ভব হলো?
বাবাঃ হুম এটাই সম্ভব হয়েছে। আসলে ছেলেটা একটা ভালো চাকরি করতো। আর মেয়েটার সাথে দীর্ঘদিন কথা বলে মেয়েটার সম্পর্কে সব খোঁজ খবর নিয়ে রেখেছে। তাই মেয়েটার পরীক্ষার পরে ছেলেটা তার পরিবারকে জানাই। আর দুই পরিবার রাজি হয়।
ছেলেঃ তাহলে সেইদিন মেয়েটাকে দেখতে ওই ছেলেটার পরিবার গিয়েছিলো?
বাবাঃ হ্যাঁ।
ছেলেঃ ওহ এইবার বুঝলাম। এইজন্যই ছেলেটা সবসময় মেয়েটার কথায় কান দিতো না। কারণ সে তো জানতো তার বিয়ে ওই মেয়েটার সাথেই হচ্ছে। ঠিক বলেছি না বাবা?
বাবাঃ হ্যাঁ ঠিক। এই তো আমার লক্ষী ছেলেটা বুঝে গেছে।
ছেলেঃ বাবা তারপর কী হয়েছিলো?
বাবাঃ তারপর মেয়েটা পুরো পথে বারবার ছেলেটার দিকে লুকিয়ে লুকিয়ে তাকাচ্ছিলো। কিন্তু নতুন বউ বলে কথা, তাই হাজার প্রশ্ন তার মনে থাকা স্বত্ত্বেও জিজ্ঞাসা করতে পারছিলো না। কেমন যেন অস্থিরতা কাজ করছিলো মেয়েটার ভিতর।
ছেলেঃ সত্যি বাবা ওমন পরিস্থিতিতে না জিজ্ঞাসা করে থাকা যায় না।
বাবাঃ হুম, কিন্তু মেয়েটা নিজেকে শান্ত করে অপেক্ষা করলো। রাতে যখন স্বামী মানে সেই ছেলেটাকে পেলো সব ঘটনা শুনে তারপর সে শান্ত হলো। তবে মেয়েটা এখন অনেক খুশি, কারণ সে যাকে মনে মনে চেয়েছিলো তাকেই জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছে।
ছেলেঃ কেমন অদ্ভুত ব্যাপার।
বাবাঃ আর মেয়েটা তখন তার মনের কথা ছেলেটা কে বলে। ছেলেটাও বলে যে "আমিও তোমাকে তোমার থেকেও বেশি ভালোবাসি" আর তাই বউ করে ঘরে এনেছি। আর কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবে না।
ছেলেঃ যাক অবশেষে তারা দু'জন দুজনকে পেয়ে গেলো।
বাবাঃ হ্যাঁ।
ছেলেঃ তারপর নিশ্চয় তারা সুখে শান্তিতে সংসার করছিলো?
বাবাঃ সুখ! সুখ সবার কপালে বেশিক্ষণ থাকে না।
ছেলেঃ কেন বাবা, একথা বলছো কেন?
বাবাঃ প্রথম দুই বছর খুব সুখে শান্তিতে তারা সংসার করছিলো। দুই বছর পরে মেয়েটা প্রেগন্যান্ট হয়।
ছেলেঃ এটা তো সুখের সংবাদ।
বাবাঃ এটা নিঃসন্দেহে সুখের সংবাদ ছিলো। তারাও অনেক খুশি হয়েছিলো এই খবরে।
ছেলেঃ তাহলে?
বাবাঃ ডেলিভারির সময় হয়ে গেলো, মেয়েটাকে নিয়ে হাসপাতালে যায়। (বলতে বলতে কান্না শুরু করে)
ছেলেঃ ও বাবা তোমার আবার কী হলো? তুমি কাঁদছো কেন?
বাবাঃ... (কোনো উত্তর দেয় না।)
ছেলেঃ বাবা, কী হলো তোমার? হাসপাতালে নিয়ে গেলে খারাপ কিছু হয়েছিলো?
বাবাঃ চোখ মুছে.... হ্যাঁ মেয়েটার অবস্থা অনেক খারাপ ছিলো। ডাক্তার বললো..সিজার না করলে বাচ্চা এবং মা দুজনকে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে যাবে।
তারপর তাকে নিয়ে যায়...প্রায় দুই ঘণ্টা পরে ডাক্তার বের হয়...ছেলেটা দৌড়ে গিয়ে জানতে চাইলে ডাক্তার বলে "আপনার একটা ফুটফুটে ছেলে সন্তান হয়েছে" - আলহামদুলিল্লাহ। কিন্তু ডাক্তার আমার ওয়াইফ কেমন আছে? "সরি স্যার আপনার স্ত্রী কে বাঁচানো সম্ভব হয় নি" - ডাক্তার। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করেও দুজনকে বাঁচাতে পারিনি।
ছেলেটা একথা শুনে বাকরুদ্ধ হয়ে মাটিতে বসে পড়ে।
ছেলেঃ (ছেলের চোখে জল ছলছল করছিলো) এভাবে তাদের ভালোবাসা শেষ হয়ে গেলো? এমন মর্মান্তিক হৃদয়বিদারক ঘটনা!
বাবাঃ না, ভালোবাসা শেষ হয় নি। "স্বপ্ন" তুমি এখন যাও, আমি একটু একা থাকতে চাই।
(স্বপ্নের বাবা কিছুক্ষণ একা থাকতে চাইলো। ছেলে (স্বপ্ন) রুম থেকে চলে গেলো। বাইরে যেয়ে ছেলেটা ভাবতে থাকে পুরো গল্পটা নিয়ে। হঠাৎ তার মনে একটা প্রশ্ন আসে আর সে আবার ঘরে আসে বাবাকে দেখলো....(চলবে)
~ মোঃ শাহারুখ হোসেন
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন