Welcome To My Official Blog Site

নতুন নতুন সব আপডেট পেতে আমাদের সাইটের সাথেই থাকুন। আর কোন সমস্যা হলে আমার সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ করবেন www.facebook.com/ShaharukhOfficial

এই ব্লগটি সন্ধান করুন

মঙ্গলবার, ২ জুন, ২০২০

এই ভালোবাসার শেষ কোথায়? ১১তম পর্ব (শেষ পর্ব) ~ মোঃ শাহারুখ হোসেন

এই ভালোবাসার শেষ কোথায়?
১১তম পর্ব (শেষ পর্ব)
১০ম পর্ব পড়ুন এখানে...
এসে দেখলো বাবা দেয়ালের ফটকের সামনে দাঁড়িয়ে কাঁদছে।
ছেলেঃ এ কী বাবা তুমি মায়ের ছবি দেখে দেখছো কেন!
বাবাঃ তোমাকে না বললাম, আমাকে একটু একা থাকতে দাও!
ছেলেঃ সরি বাবা!
বাবাঃ হুম কী জন্য এসেছো তাই বলো?
ছেলেঃ আচ্ছা বাবা, আমার মনে সেই থেকে একটা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তুমি যে গল্পটা বলছো, এই গল্পটা তুমি কীভাবে জানো? সেই ছেলে/মেয়ে দু'জন কী তোমার বন্ধু ছিলো? এতো বিস্তারিতভাবে তুমি গল্পটা বলছো, তুমি এতোকিছু কীভাবে জানো? এটা কার গল্প?
বাবাঃ (চোখে মুছে একটু মুচকি হেসে) এতোক্ষণেও বুঝতে পারো নি?
ছেলেঃ না....আর সেজন্যেই তো শুনতে এসেছি।
বাবাঃ এই গল্পের সেই ছেলেটা আর কেউ নয় রে "স্বপ্ন", সেই ছেলেটাই তোমার বাবা "শিহাব আহমেদ"।
ছেলেঃ হোয়াট???? তুমি???? ওয়েট ওয়েট.. বাবা। কী বলছো এসব!.. আমার মাথা তো পুরাই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিছুই বুঝতেছি না।
বাবাঃ হ্যাঁ বাবা এটাই সত্য। সেদিন তোমাকে পৃথিবীতে আনতে গিয়েই তোমার মা এই পৃথিবী কে বিদায় নেয়।
ছেলেঃ কিন্তু তুমি এতোদিন আমাকে বলেছ, আমার মা নাকি তোমার সাথে ঝগড়া করে বিদেশে চলে গেছে। আমার এস এস সি পরীক্ষার পর আমাকে নিয়ে মা'য়ের কাছে যাবে। কিন্তু এখন কী বলছো বাবা!! (ছেলে কান্না করে ফেলে)
বাবাঃ আসলে তুমি সত্যটা জানলে সহ্য করতে পারতে না, মানসিকভাবে ভেঙে পড়তে। সেজন্য এতোগুলা বছর তোমাকে এই মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে এসেছি৷ অল্প বয়সে মা হারানোর ব্যথা তোমাকে দিতে চাই নি। আর সৎ মা তোমার খেয়াল ঠিকমতো রাখবে কী না! এই ভেবে কখনো দ্বিতীয় বিয়েও করি নি।
ছেলেঃ (ছেলে কাঁদতে কাঁদতে বাবাকে জড়িয়ে ধরে) বাবা তুমি এতোগুলা বছর এই কষ্ট বুকে নিয়ে বেঁচে আছো! এতোদিন কেন আমাকে বলো নি? সব সময় মায়ের ছবির দিকে তাকিয়ে কেঁদেছ। জিজ্ঞাসা করলে বলতে এটা তোর মা, ভালো করে লেখাপড়া করো তাহলে তোমার মায়ের কাছে নিয়ে যাবো।
বাবাঃ আরে পাগল ছেলে কাঁদছো কেন? তোমার মা'কে তো কথা দিয়েছিলাম বিয়ের পর আমার সন্তানকে আমাদের গল্প বলবো৷ আর আজ পনেরো বছর পর তোমার মা'কে দেয়া সেই কথাটা পূরণ করলাম।
ছেলেঃ বাবা, তুমি আমাকে মাফ করে দেও। আমি তোমাকে ছেড়ে কোথাও যাবো না৷ তুমি আমার জন্য নিজের জীবনের এতোগুলা বছর নিঃসঙ্গতায় কাটিয়েছো। আর আমি তোমাকে কষ্ট দিয়ে বাড়ি থেকে চলে যেতে চাইছিলাম। আমি ভুল করেছি বাবা, তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও।
বাবাঃ ক্ষমা চাইতে হবে না বাবা। তোমার ওপর আমার কোনো রাগ নেই। তুমি যে বুঝতে পেরেছো এতেই আমি অনেক খুশি।
ছেলেঃ আমি এতোদিন মায়ের বিদেশ চলে জন্য তোমাকে দোষারোপ করতাম। কিন্তু আজ সবকিছু জেনে নিজের উপর অনেক রাগ হচ্ছে। আমাকে ভূমিষ্ট করতে গিয়ে মা মৃত্যু বরণ করেছে, আমিই তো দায়ী।
বাবাঃ পাগল ছেলে বলে কী! তুমি বা আমি কেউ-ই দায়ী নই। আল্লাহ তোমার মায়ের হায়াত ওই পর্যন্ত রেখেছিলো সেজন্য আল্লাহ নিয়ে গেছেন। নিজেকে অপরাধী বা দোষী মনে করো না বাবা।
ছেলেঃ এভাবে আমাদের গল্পটা শেষ হবে বুঝিনি, বাবা।
বাবাঃ তোমার মায়ের আর আমার গল্পটা হয়তো এখানেই শেষ। কিন্তু এই ভালোবাসার শেষ কোথায়? এটা আজও জানি না। আসলে ভালোবাসা কখনো শেষ হয় না, ভালোবাসা পরিবর্তন হয়। ভালোবাসা একজন থেকে আরেকজনে স্থান্তরিত হয়। আর তাইতো তোমার মায়ের আমার ভালোবাসার গল্পটা শেষ হয়ে গেছে, কিন্তু ভালোবাসা বেঁচে আছে তোমার মাঝে। আর এভাবেই ভালোবাসা বেঁচে থাকে পৃথিবীতে কারো না কারো মাঝে।
ভালোবাসা পুরোপুরি নিঃশেষ হয়না।

ছেলেঃ হুম বাবা। পদার্থ বিজ্ঞানে পড়েছি, শক্তির প্রধান উৎস সূর্য। আর এই শক্তি কখনো পুরোপুরি শেষ হয় না। এটা এক পদার্থ থেকে আরেক পদার্থে সঞ্চারিত হয়। ঠিক ভালোবাসাও তেমন শেষ হয় না, কারো না কারো মাঝে থাকে।
বাবাঃ হ্যাঁ ঠিক তাই। সামনে তোমার এস এস সি পরীক্ষা। ভালো করে লেখাপড়া করবে। তোমাকে নিয়ে তোমার মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিলো। তুমি মানুষের মতো মানুষ হবে।
ছেলেঃ এজন্যই কী আমার নাম "স্বপ্ন" রেখেছো?
বাবাঃ এই নামটা তোমার মা'য়ের দেয়া। তোমার জন্মের আগেই ঠিক করে রেখেছিলো।
ছেলেঃ বাবা!
বাবাঃ হ্যাঁ বলো..
ছেলেঃ মায়ের কবরটা কোথায়? আমাকে নিয়ে চলো, আমি জিয়ারত করে আসতে চাই। (দু'চোখে অশ্রু)
বাবাঃ এসো আমার সাথে...

কবর জিয়ারত করে বাসায় ফিরতে ফিরতে বাবা ছেলেকে বলছেন...
বাবাঃ সবকিছুই তোমাকে বললাম। কখনো মন খারাপ করবে না, নিজেকে অপরাধী মনে করবে না। মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করবে আর মানুষের মতো মানুষ হবে।
ছেলেঃ ইনশাআল্লাহ 'বাবা'।

(এদের গল্পটা হয়তো এখানেই শেষ। কিন্তু এই ভালোবাসা চলতে থাকবে অনন্তকাল। মানুষের মাঝে এমন ভালোবাসা বেঁচে থাকুক। পুরো পৃথিবীটা হোক ভালোবাসার।)

[সম্পূর্ণ গল্পটা পড়ে আপনাদের কেমন লাগলো জানাবেন। ইনশাআল্লাহ আপনাদের অনুপ্রেরণা পেলে আরো ভালো কিছু লিখবো। ধন্যবাদ সকলকে এতোদিন সব পর্বগুলো পড়ার জন্য।]

~ মোঃ শাহারুখ হোসেন

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন